Ad Banner 468x60px

কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন


এক দশক আগেও বিয়ের আয়োজনের বেশির ভাগই হত বর-কনের বাড়িতে। কিন্তু সময় বদলে গেছে। বাড়িতে এখন আর আগের মতো খোলা জায়গা নেই বললেই চলে। কিন্তু বাড়ির খোলা জায়গার অভাবে তো আর বিয়ের চাহিদা বন্ধ হয়ে যেতে পারে না; তা-ই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শহরজুড়ে প্রতিটি এলাকায় গড়ে উঠেছে কমিউনিটি সেন্টার। বিয়ে ছাড়াও নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কমিউনিটি সেন্টারের প্রয়োজতীয়তার কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে কাছাকাছি যে কোনো কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করে ফেলতে পারেন বিয়ের অনুষ্ঠান। খরচাপাতি কিছুটা বেশি হলেও অত্যন্ত গোছালো ও পরিপাটি আয়োজনে সম্পন্ন করতে পারবেন বিয়ের আয়োজন।


আসন সংখ্যা
কমিউনিটি সেন্টারের আসল সুবিধাই হল একসঙ্গে অনেক লোকের আপ্যায়ন করানো। বিয়ের অনুষ্ঠানে তো এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। ঢাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে একসঙ্গে ১৫০ থেকে ৭০০ লোকের আপ্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। আগত অতিথি সংখ্যা আরও বেশি হলে একাধিক বৈঠকে সম্পন্ন যাবে খাবার পর্ব।
খরচাপাতি
কমিউনিটি সেন্টারের বিয়ের খরচাপাতি গ্রীষ্ম ও শীতকালে ভিন্ন। গ্রীষ্মকালে তুলনামূলক কম আয়োজন হয় বলে খরচও কিছুটা কম থাকে। তবে শীতকালে বেশি আয়োজন হয়, তাই খরচও থাকে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। বেসরকারি কমিউনিটি সেন্টারের তুলনায় কিছুটা কম খরচ হয় সরকারি কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত এসব কমিউনিটি সেন্টারে সারা দিনের কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করলে খরচ পড়বে ৯ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অর্ধবেলার জন্য খরচ পড়বে ৭ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে সারা দিনের অনুষ্ঠানের জন্য খরচ করতে হবে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এ খরচ গ্রীষ্মকালের জন্য। শীতকালে খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। অর্ধবেলার অনুষ্ঠানের জন্য খরচ করতে হবে গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কম।
বুকিং পদ্ধতি
এলাকা ভেদে অনুষ্ঠানের এক থেকে তিন মাস আগে থেকেই বুকিং করতে হয় কমিউনিটি সেন্টার। অভিজাত এলাকায় মূলত কমিউনিটি সেন্টার খালি থাকা সাপেক্ষে ভাড়া পাওয়া যাবে। বুকিং করার সময় মূল ভাড়ার ১০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত মূল্য পরিশোধ করতে হয়।
খাবার প্যাকেজ খরচ
কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে ক্যাটারিং সার্ভিস বা খাবার প্যাকেজ ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কিছু প্যাকেজ কমিউনিটি সেন্টারই অফার করে, ইচ্ছা করলে আবার নিজের চাহিদা মতো নির্ধারণ করাও যায়। এই সার্ভিসে জনপ্রতি সাদা পোলাও, রোস্ট (মুরগি), রেজালা, বোরহানি, ফিরনি, টিকিয়া ও সালাদ; এ সাত পদের জন্য খরচ হবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। তবে রেজালা যদি খাসির হয়, তবে জনপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে খরচ বেশি হবে। প্যাকেজ প্রতি খাবার আইটেম কম বেশি করলে দামের ক্ষেত্রেও আসবে তারতম্য।
বাবুর্চি ও ওয়েটার
কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় পর্বই হল খাওয়া-দাওয়া। এ পর্বকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রয়োজন সেরা বাবুর্চির সেরা রান্না আর দক্ষ ওয়েটারের বিশ্বস্ত হাতের সেবা। রান্না করার জন্য প্রতিটি কমিউনিটি সেন্টারে রয়েছে নিজস্ব বাবুর্চি দল। নিজস্ব চাহিদার উপকরণগুলো সরবারহ করলে তারাই রান্না করে দেবে। রান্নার জন্য দিতে হবে আলাদা পারিশ্রমিক। বিভিন্ন এলাকায় ৫০০ থেকে ৭০০ লোকের রান্নার জন্য লালবাগ, চকবাজার, খিলগাঁও এবং রামপুরা থানাধীন কমিউনিটি সেন্টারের নিজস্ব বাবুর্চিদের জন্য খরচ করতে হবে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। মিরপুর ও পল্লবী এলাকার কিছু কিছু কমিউনিটি সেন্টারে এ খরচটা নির্ধারিত হয় জনপ্রতি।
রান্নার জন্য কমিউনিটি সেন্টারের নিজস্ব বাবুর্চিই ভালো, এ ক্ষেত্রে খরচও কম পড়ে। আর ওয়েটারের জন্যও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কিছু কিছু কমিউনিটি সেন্টার বিনাখরচে ওয়েটারের সেবা দিয়ে থাকে। কোথাও কোথাও আবার ওয়েটারদের জন্য খরচ করতে হবে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। সাধারণ ২০০ লোককে খাওয়ানোর জন্য ১০ থেকে ১২ জন ওয়েটারই যথেষ্ট। ৫০০ লোকের জন্য প্রয়োজন পড়বে ১৫ থেকে ২০ জন ওয়েটার। ওয়েটার বাছাইয়ে অবশ্যই প্রশক্ষণপ্রাপ্তদের প্রধান্য দিতে হবে, সেইসঙ্গে খাবার পরিবেশনের সময় নিজেদেরও তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।
ভাড়া করার আগে
কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করার আগে কিছু বিষয় জেনে নিন গুরুত্ব দিয়ে। তার আগে নির্ধারণ করুন নিজেদের চাহিদা। এতে বোঝা যাবে কোন কমিউনিটি সেন্টারটি আপনার জন্য বেশি উপযুক্ত। জেনে নিন ভবনের ফ্লোর সংখ্যা, আসন সংখ্যা, হলরুমের আসন সংখ্যা, নারী-পুরুষের খাবার ব্যবস্থা আলাদা কিনা। জেনে নিন বাবুর্চি ও ওয়েটার সেবার বিষয়টি, বিল পরিশোধ পদ্ধতি। স্পষ্ট ধারণা রাখুন গাড়ি পার্কিং, বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থা এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পর্কেও। খেয়াল রাখুন ওয়াশরুম ও টয়লেট সম্পর্কেও।